মানব কল্যাণে বিজ্ঞান রচনা class 10
ভূমিকা: মানুষ আজ একবিংশ শতাব্দীতে পা রেখেছে। বিজ্ঞানের রথে চড়েই তার এই বিজয়যাত্রা, কৌতুহলী মানুষের মন আবিষ্কার করে। ফেলেছে জীবন ও জগতের নানা গোপন রহস্য। সে আজ জেনে গেছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়ম, নিয়মের ফল। তার অমিত শক্তির সীমাহীন বিস্তারের কথাও সে আজ জেনে গেছে। শুধু তাই নয়, সে আজ এ কথাও বুঝেছে তার অসীম শক্তির মধ্যেই লুকিয়ে আছে ধ্বংসের বীজ। ধ্বংসের এই বীজতলা তৈরি হয়েছে মানুষের বৈজ্ঞানিক সাফল্যের মাটিতেই। তাই মানুষ আজ যেমন গর্বিত তেমনি মানুষ আজ শঙ্কিতও বটে।
মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞান: একদিন অবাকবিস্ময়ে পৃথিবীর প্রথম মানুষ সূর্য ওঠা দেখেছিল। ঝড়, তুফান, বিদ্যুতের আকস্মিক ঝলকানির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একদিন সে আতঙ্কিত হয়েছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ভয়ংকর রূপ দেখে মানুষ সেদিন স্তম্ভিত হয়েছিল। ভয়ে আর আতঙ্কে সেই প্রাকৃতিক শক্তিকে তাই তারা পুজো করতে শুরু করেছিল। এরপর একদিন আগুন আবিষ্কার হল। মানুষ জেনে ফেলল জল-স্থলের রহস্য। সরে গেল অন্তরীক্ষের যবনিকা। যুক্তি আর বুদ্ধি দিয়ে সে বিচার করে নিল বিশ্বব্রত্মাণ্ডের সমস্ত কার্যকারণ সম্পর্ক। আর তারপর থেকেই মানুষ জানতে শুরু করল নানা রোগব্যাধির কারণ। অকালমৃত্যু, মহামারি কমে এল। শস্যশ্যামলা হয়ে উঠল বসুন্ধরা। কারখানার সাইরেন জানিয়ে দিল বিশ্ববাসী আজ কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ছে। দূরদূরান্তের এমনকি মহাকাশের নানা সংকেতও পৌঁছে দিয়েছে বিজ্ঞান। মানবসভ্যতার চালকের আসনে ধীরে ধীরে উঠে এল বিজ্ঞান। মানুষকে করে তুলল অনেকটাই কমহীন। আর এখান থেকেই দেখতে শুরু করলাম বিজ্ঞানের বিপরীতে অন্য এক ছবি।
বিজ্ঞানের কুফল: মানুষ আজ বিজ্ঞানের হাত ধরে ক্রমশই যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞান মানুষের জীবনে যে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে তা আমাদের ক্রমশই করে তুলেছে পরমুখাপেক্ষী। আমরা ক্রমশই আরামপ্রিয়, কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছি। অন্যদিকে বিজ্ঞানের হাত ধরে সমাজে কর্মসংস্থানও ক্রমশই সংকুচিত হয়ে পড়ছে, কাজ হারাচ্ছে মানুষ। অন্যদিকে পৃথিবীতে জনসংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে, ফলে সমাজে বেকারত্ব বাড়ছে। বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে মানুষ লাভের অঙ্ক বাড়াতে পারে বলেই কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমে কমে যাচ্ছে। এরই পাশাপাশি বিজ্ঞানের অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশগত ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, জলদূষণের ফলে পৃথিবীতে রোগব্যাধি বাড়ছে। বহু প্রজাতিসহ পশুপাখিও আজ ধ্বংসের প্রহর গুনছে। মারণাস্ত্রে ভরে গেছে নানা দেশের অস্ত্রভাণ্ডার। পরমাণু বোমা তো আছেই, তা ছাড়া জীবাণু বোমার আতঙ্কেও মানুষ আজ মানবপ্রজাতি ধ্বংসের আতঙ্ক বুকে নিয়ে প্রহর গুনছে।
উপসংহার: অমিত শক্তিধর মানুষ বিজ্ঞানের হাত ধরেই সাধনায় সিদ্ধি পেয়েছে। এই শক্তিসাধনার ফলশ্রুতিতে মানবজীবনে জমেছে যান্ত্রিকতা। তার মনের সুকুমার বৃত্তিগুলি আজ ধ্বংসের পথে। অথচ বিজ্ঞান মানবজীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছে, তাকে অস্বীকার করার ক্ষমতাও আজ আর মানুষের নেই। তাই বিজ্ঞানের কল্যাণী মূর্তির পাশাপাশি ধ্বংসের ছবিও আমরা আজ লক্ষ করি। বিজ্ঞানের সাধনা হল সকল মানুষের কল্যাণসাধনা। বিজ্ঞানের শক্তিকে সুপথে পরিচালিত করলেই তা আশীর্বাদযোগ্য হয়ে উঠবে।