কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা

ভূমিকা

বর্তমান বিশ্ব বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে মানুষের জীবনধারা যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনি কৃষিকাজেও এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তনকৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা এখন সময়ের দাবি, কারণ আধুনিক কৃষি শুধু কাস্তে-হালচাষে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আজ প্রযুক্তিনির্ভর এক গুরুত্বপূর্ণ খাত। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাহায্যে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ, উন্নত জাত উদ্ভাবন এবং কৃষিকাজকে লাভজনক করে তোলা সম্ভব হয়েছে।

কৃষির অতীত ইতিহাস

আদিম যুগে মানুষ ছিল প্রকৃতিনির্ভর। তারা গুহায় বাস করতো, ফলমূল সংগ্রহ করতো এবং পশু শিকার করে খাদ্য জোগাড় করতো। সময়ের সাথে তারা বীজ বপন ও পশুপালন শিখে কৃষির সূচনা করে। তবে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের কোনো ভূমিকা ছিল না। ফলে কৃষিকাজ ছিল শ্রমসাধ্য, সময়সাপেক্ষ এবং অনিশ্চিত।

আধুনিক কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রভাব

কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা করতে গেলে প্রথমেই বলতে হয়, বিজ্ঞানের কারণে আজ কৃষিকাজে এসেছে বহু পরিবর্তন। যেমন:

  • উন্নত জাতের ধান, গম, সবজি ইত্যাদি উদ্ভাবন
  • জমির উর্বরতা বাড়াতে উন্নত সার ও জৈব সার ব্যবহার
  • আধুনিক সেচ ব্যবস্থা
  • কীটনাশক ও বালাইনাশক প্রয়োগে রোগ নিয়ন্ত্রণ
  • যান্ত্রিক কৃষির মাধ্যমে সময় ও শ্রম সাশ্রয়

ট্রাক্টর, থ্রেশার, পাওয়ার টিলার, স্প্রে মেশিন, সিডার ইত্যাদি যন্ত্রপাতির ব্যবহার কৃষিকে করেছে দ্রুত, ফলপ্রসূ এবং লাভজনক।

উন্নত বিশ্বের কৃষিতে বিজ্ঞানের প্রয়োগ

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান প্রভৃতি দেশে কৃষিকাজ পুরোপুরি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর। তারা রোবটিক কৃষি, ড্রোন প্রযুক্তি, স্মার্ট সেন্সর, অটোমেটেড সেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করে। ফলে কম জনবলেই বিশাল আকারে চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছে।

বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান

বাংলাদেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা করার পেছনে অন্যতম কারণ হলো কৃষিই দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। মোট জাতীয় আয়ের বড় অংশ কৃষি থেকে আসে। তবে আজও দেশের বেশিরভাগ কৃষক প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিকাজে অভ্যস্ত নয়
সেই সমস্যা দূর করতে:

  • উন্নত প্রযুক্তি সহজলভ্য করা
  • কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া
  • বন্যা, খরা ইত্যাদি দুর্যোগ মোকাবেলায় বৈজ্ঞানিক কৌশল অবলম্বন করা জরুরি

কৃষি গবেষণায় বাংলাদেশের অগ্রগতি

বাংলাদেশের বিএআরআই, ব্রি, বিএলআরআই প্রভৃতি সংস্থা বহু উচ্চফলনশীল ফসল, উন্নত বীজ, রোগপ্রতিরোধী জাত উদ্ভাবন করেছে।
কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা বাস্তবায়নে সরকারের উচিত:

  • এই প্রযুক্তিগুলো তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া
  • শিক্ষিত তরুণদের কৃষিতে আগ্রহী করা
  • সফল কৃষকদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া

উপসংহার

কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সম্ভব। এজন্য কৃষিপেশাকে সম্মানজনক করে তোলা, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং বিজ্ঞাননির্ভর পদ্ধতিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সময়ের দাবি।