পরিবেশ দূষণ রচনা

ভূমিকাঃ আকাশ, বাতাস, জল, উদ্ভিদজগত, প্রাণীজগত সবকিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ। এগুলির কোনোটিকে বাদ দিয়ে আমরা বাঁচতে পারি না। মানুষ তার বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে এবং অনলস পরিশ্রমে তার চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে সাজিয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বেশি মণিমানিক্য সংগ্রহ করে মানুষ উষর মরুভূমির বুকেও ফুটিয়েছে সোনালী ফসল। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানান ভাবে দূষিত হচ্ছে। যেমনঃ বায়ু, জল, মাটি, শব্দ ইত্যাদি দূষণের ফলে মানুষের জীবনেও এসেছে নানা রকম দূরারোগ্য ব্যাধি ।
বায়ুদূষণ ও মানবজীবনে তার প্রভাবঃ আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম ও প্রধান হলো বায়ু বা বাতাস যা ছাড়া প্রাণীজগত এক মুহূর্ত ও বাঁচতে পারে না। বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হল নিউক্লীয় আবর্জনা, কয়লা পুড়িয়ে কার্বন-ডাই অক্সাইড বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া, কলকারখানার দূষিত গ্যাস, যানবাহনের জ্বালানি পোড়া গন্ধ বাতাসে মিশে বাতাস দূষিত হচ্ছে। দূষণের ফলে মানুষের শ্বাসকষ্ট, ক্যান্সারের মতো দুরারোগ্য ব্যাধির শিকার হতে হচ্ছে।
জলদুষণ ও তার প্রতিক্রিয়াঃ জলের আর এক নাম জীবন। জল ছাড়া কোনো জীব বাঁচে না। অথচ সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে কলকারখানার সংখ্যা বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। সেই কলকারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থমিশ্রিত জল নদীর জলে মিশে নদীর জলকে দূষিত করছে। এছাড়া শহরের সমস্ত নর্দমার জল ও নদীতে পড়ে নদীর জলকে দূষিত করছে। ফলে জলবাহিত রোগের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবাহিত রোগে আজ মানুষ বড় বিপন্ন ৷
শব্দদূষণ ও তার প্রতিক্রিয়াঃ কলকারখানার উচ্চশব্দ, যন্ত্রচালিত গাড়ির হর্ন, বাজি-পটকার শব্দ মাইক্রোফোনের আওয়াজে মানুষের শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। মানসিক বিপর্যয়, রক্তচাপ বৃদ্ধি, স্নায়বিক অস্থিরতা ইত্যাদি নানা রকমের সমস্যা সৃষ্টি করছে।
মাটিদূষণঃ বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে সবুজবিপ্লব এসেছে। কিন্তু উৎপাদন বৃদ্ধি করতে গিয়ে জমিতে নানা প্রকারের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে, এর ফলে মাটি দূষিত হচ্ছে। সারা বছর জমিতে সেচব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য বহু নদীতে বাঁধ দিয়ে নদীর গতিকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছে, এতে একদিকে যেমন নদীর জল দূষিত হচ্ছে অপরদিকে মৃত্তিকা দূষণ ও হচ্ছে। রাসায়নিক সার দ্বারা প্রস্তুত কৃষিজাত সামগ্রী থেকে নানা ধরণের রোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণের প্রতিকারঃ পরিবেশ দূষণ আজ সারা পৃথিবীর একটি বিরাট সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের কিছু ব্যবস্থা নিতে হবে। সব রকম দূষণ থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে একমাত্র উদ্ভিদ। সবুজ উদ্ভিদ বা গাছ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিজের খাদ্য নিজে প্রস্তুত করতে পারে। এই প্রক্রিয়ায় গাছ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে আর বাতাসে অক্সিজেন ছেড়ে দেয়। যে অক্সিজেন প্রাণীজগতের বাঁচার জন্য অপরিহার্য্য । তাই বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে। তাহলে বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য বজায় থাকবে। কলকারখানা থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়ন্ত্রক যন্ত্রের ব্যবস্থা গ্রহণ, যথা কলকারখানার বা নর্দমার তরল যাতে নদীর জলে না মেশে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শব্দদূষণ কমানোর জন্য শব্দ নিরোধক যন্ত্রের ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের প্রয়োগ বেশি করে এবং কীটনাশকের পরিমাণ কমিয়ে মৃত্তিকা দূষণ রোধ সম্ভব। সর্বোপরি যানবাহনে পেট্রল বা ডিজেল পোড়ানোর পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবহার করতে পারলে দূষণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
উপসংহারঃ পরিবেশ দূষণ একটা গুরুতর সমস্যা। আজ মানব সভ্যতার অস্তিত্ব বিঘ্নিত। এই গভীর সংকটের মোকাবিলা | করার জন্য আমাদের প্রত্যেকেই সচেতন হতে হবে এবং নজর দিতে হবে যাতে পরিবেশের দূষণের মাত্রা না বাড়ে। কারণ বিজ্ঞান যতই উন্নত হোক বা প্রযুক্তিবিজ্ঞান যতই আমাদের উন্নতির শীর্ষে নিয়ে যাক না কেন মানুষের জন্যে সভ্যতা মানুষের হাতেই যদি বিনাশ হয় তাহলে কি লাভ- কারণ বনে আগুন লাগলে দেবালয় কি এড়ায়? এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদের সবাইকেই হাত মিলিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে হবে।

আরও পড়ুন