সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বাংলাদেশ রচনা

সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে যা সম্প্রদায়ে-সম্প্রদায়ে ঝগড়া-বিভেদ সৃষ্টি করে সমাজে বিপর্যয় সৃষ্টি করা। এতে সৃষ্টি হয় মানুষের মনে অমানবিক বিদ্বেষ ও ঘৃণা। তাই সাম্প্রদায়িকতা কোনো শুভবুদ্ধির উনোষ ঘটায় না। মানুষের মনকে করে সংকীর্ণ। বিশেষ করে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িকতার কারণে হত্যা, দাঙ্গা, লুণ্ঠন প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটে। সভ্যতার অগ্রগতিতে সাম্প্রদায়িকতা একটি কঠিন বাধার সৃষ্টি করে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব – “আশরাফুল মাখলুকাত”। এ শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতে হলে মানুষকে অবশ্যই মানবতাবাদী হয়ে হবে।
‘সম্প্রদায়’ শব্দ থেকে সাম্প্রদায়িকতা শব্দটির সৃষ্টি। সম্প্রদায় শব্দের আভিধানিক অর্থ দল বা গোষ্ঠী, সুতরাং সাম্প্রদায়িকতা শব্দের যথার্থ অর্থ হলো দলীয় বা গোষ্ঠীগত মত বা মনোভাব। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা শব্দটি ইদানীং উগ্র ধর্মবিশ্বাসীদের অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপের অর্থ বহন করে। ধর্মের মহৎ উদ্দেশ্য বিচ্যুত হয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে কেউ যখন ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয় তখনই সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে পথ হারায় সুস্থ ও সুন্দর জীবনবোধ। একদল মানুষ যখন নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বকে জোর করে অন্যের উপর চাপিয়ে দিতে বা প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তখন সাম্প্রদায়িকতার অবশ্যম্ভাবী আবির্ভাব ঘটে। অনুদার জাত্যভিমান, সংকীর্ণ গোষ্ঠীচেতনা জন্ম দেয় ধৈর্যহীনতা ও অসহিষ্ণুতার। ফলে ধ্বংসের নেশায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে মানুষ। তখন তাদের স্বাভাবিক বিচারবুদ্ধি লুপ্ত হয়ে যায়, হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।
মানুষে-মানুষে কোনো ভেদাভেদ নাই। বর্তমানে সাম্প্রদায়িকতার কারণে এ নীতিবাক্য ধূলিসাৎ হয়ে পড়েছে। নানা উদ্দেশ্য সিদ্ধির জন্য সমাজের নেতৃস্থানীয় কিছু লোক সর্বসাধারণের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়। এর মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই প্রধান। ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে নাড়া দিতে পারলেই তাদের সুপ্ত উদ্দেশ্য হাসিল হয়। ‘এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের লোককে শাসন করবে এটা কখনও মেনে নেয়া যায় না’ এটাই হয় সুবিধা ভোগীদের উসকানিমূলক বক্তব্য। ফলে শুরু হয়ে যায় দাঙ্গা, খুনাখুনি আর হানাহানি। আর এই ঘোলা জলে সুবিধাভোগী রাজনীতিবিদগণ মৎস্য শিকারে তৎপর হয়ে ওঠেন। নিজেদের আসন পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা করেন। বিশ্বের বহু দেশে আজ এ অবস্থা দেখা যায় ।
এ উপমহাদেশে হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যকার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কথা বিশ্বের ইতিহাসে এক কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। বিহারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছিল ১৯৪৬ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত, যেখানে হিন্দু জনতা মুসলিম পরিবারগুলিকে টার্গেট করেছিল। যা ১৯৪৬ বিহার দাঙ্গা নামে পরিচিত। মোগল আমলে ১৭৩০ সালে দোল খেলাকে কেন্দ্র করে হিন্দু- মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা লেগেছিল এবং লক্ষ লক্ষ লোকের রক্তক্ষয় হয়েছিল। ১৯২০ থেকে ১৯৪৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশের নানা জায়গায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সুত্রপাত ঘটে। ১৯২২ থেকে ১৯২৭-এর মধ্যে ১৯২টি দাঙ্গার কথা জানা যায় এবং এতে অসংখ্য লোকের প্রাণহানি ঘটে। ১৯৩০ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই ভারতে দাঙ্গা সংঘটিত হয়। ১৯৪৬, ১৯৯০ সালেও ছোটখাটো দাঙ্গা লেগেছিল। ভারতের বাবরী মসজিদকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গা হয় তা অবর্ণনীয়। হাজার হাজার লোক সে দাঙ্গায় জীবন দিয়েছে। এর পেছনে ভারতীয় রাজনৈতিক নেতাদের অদৃশ্য হাত ছিল। এসব দাঙ্গার রেশ আজও কাটেনি।
সাম্প্রদায়িকতা মানবকল্যাণে কখনো সুফল বয়ে আনেনি। বরং মানুষে- মানুষে বিভেদ সৃষ্টির বিষবাষ্প সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভৃতি পড়ছে মুখ থুবড়ে। মানুষ শান্তি বিসর্জন দিয়ে যেন অশান্তির বাঁশি বাজিয়ে চলেছে। সাম্প্রদায়িকতার যুপকাষ্ঠে অগণিত শিশু-কিশোর-যুবা-বৃদ্ধ বলি হচ্ছে। পৃথিবীকে স্বর্গ করার প্রতিশ্রুতি গ্রহণের পরিবর্তে মানুষ যেন শশ্মশান করার ব্রত গ্রহণ করেছে। মানুষ তার মানবিক বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে
জীবন হল গতিশীল। প্রগতিই হল সমাজ উন্নয়নের চাবিকাঠি। এ যাত্রাপথে পাড়ি দিতে হলে মানুষকে ভ্রাতৃত্ববোধে আবদ্ধ হতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে সমাজ প্রগতির পথকে রুদ্ধ করে দেয়। অথচ কোন ধর্ম, কোন আদর্শই পৃথিবীতে এ সর্বনাশা ভেদবুদ্ধিকে সমর্থন করে নি। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গুরুত্বের ব্যাপারে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজও দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে সীমাহীন ভেদবুদ্ধি। আজও বিভেদ ও হিংসার অগ্নিদহন। সাম্প্রদায়িকতার জন্যেই একদিন হিটলারের গ্যাসচেম্বারে লক্ষ লক্ষ ইহুদি প্রাণ দিল। সেই ইহুদি অস্ত্রাঘাতেই আজ আবার কত প্যালেস্টাইনবাসী রক্তাপ্লুত। এখনও শ্বেতাঙ্গের কৃষ্ণাঙ্গ নির্যাতনের কলঙ্কিত ইতিহাস। এই সেদিনও ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংরেজ ও ভারতীয়দের মধ্যে সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বলে উঠেছিল। ভারতেও মাঝে মাঝে তারই নগ্ন বিভীষিকার চেহারা। ১৯৯২ সালে ভারতের কট্টর হিন্দু সাম্প্রদায়িক শক্তি অযোদ্ধার ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভেঙে দিলে বাংলাদেশেও এর তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়।
কিছু স্বার্থপর-কুৎসিত স্বভাবের মানুষ সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিয়ে উদ্দেশ্য হাসিল করতে চায়। এদেরকে চিহ্নিত করে জনগণের সামনে এদের মুখোশ খুলে দিতে হবে। ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে জাতিকে উদ্ধারের জন্য মৌলবাদী রাজনৈতিক দলসমূহ নিষিদ্ধ করতে হবে। দেশের মধ্যে জনসংখ্যানুপাতে সরকার গঠনে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকেরই প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। এতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হবে। দেশের মানুষ সুখে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
আমরা আজ উন্নয়নমুখী। আমাদের জাতীয় জীবনে গঠনমূলক কাজের উৎকৃষ্ট উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। চাষি, জেলে, কামার, কুমার, মুচি, ডোম, সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করেই জাতির উন্নয়নের জন্য গঠনমুলক পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা আমাদের জন্যে অপরিহার্য।
বর্তমানে বিশ্বের দিকে তাকালে সাম্প্রদায়িকতার স্বরূপ চোখে পড়ে। ভারত, পাকিস্তান, প্যালেস্টাইন, সার্বিয়া, বসনিয়া, হার্জেগোভেনিয়া, মিয়ানমার প্রভৃতি দেশে শুধু ভিন্ন ধর্মের নয়, গোত্রে গেত্রেও সংঘটিত হচ্ছে দাঙ্গা। তবে বিশ্বের বর্তমান দৃশ্যে শুধু মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গার দৃশ্যগুলোই চোখে পড়ার মতো। ইসরাইলের ইহুদি সম্প্রদায় বছরের পর বছর ধরে প্যালেস্টাইনি মুসলমানদের নির্মূল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। মিয়ানমারে নির্যাতিত হচ্ছে রোহিঙ্গা মুসলমানরা। ভারতের দৃশ্যও তাই। পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া- সুন্নির দাঙ্গা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামার পরিবর্তে আরো যেন প্রসারিত হচ্ছে। ফলে মানুষের মনে অস্থিতিশীলতা এবং অস্থিরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপিত না হলে সে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চরমভাবে বিরাজ করে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী বিনিয়োগের মাধ্যমে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটানোও সম্ভব হয় না। উপরন্তু দেশপ্রেমের মনোভাব জনসাধারণের মধ্যে জাগ্রত হয় না। বহিঃশত্রুর আক্রমণের ভয় থাকে। দেশের মানুষের মনে গড়ে। ওঠে বিদ্বেষ ও প্রতিহিংসামূলক মনোভাব যার সবগুলোই স্বাধীনতা ও উন্নয়নের পরিপন্থী। দেশকে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নে এর ভূমিকা অপরিসীম।
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেমন অপরিহার্য তেমনি আমাদের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্যেও এটি একান্ত প্রয়োজনীয়। আমরা যতই উন্নয়ন পরিকল্পনা আর অর্থনৈতিক উন্নতির ঘোষণা দেই না কেন, জাতীয় অর্থনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অপরিহার্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি হল আমাদের মত উন্নয়নকামী দেশের উন্নতির চাবিকাঠি। বিশ্বজনীন সামাজিক সম্প্রীতি তথা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা করেই পৃথিবীতে শান্তি ও প্রগতি স্থাপন সম্ভব। এই সম্প্রীতিই কেবলমাত্র মানব-জীবনের শিক্ষা, বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্রমবিকাশের প্যারান্টি দিতে পারে। তাই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সকলের কাম্য হওয়া উচিত।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অন্যতম পীঠভূমি হল বাংলাদেশ। এটি আমাদের গৌরব। পার্শ্ববর্তী বৃহৎ রাষ্ট্র ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়েও মাঝে মাঝে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় জড়িয়ে পড়ছে। চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। কিন্তু এর বিষময় প্রতিফলন ঘটেনি আমাদের দেশে। এদেশের মানুষের সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনা এখানে লক্ষণীয়। এ সচেতন মনোবৃত্তি আছে বলেই এ দেশের বুকে পার্শ্ববর্তী দেশের চরম সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড এবং ঘটনাবলির কোনো অশুভ প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয় নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান জনগোষ্ঠীর সাথে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সকলেই মিলেমিশে বসবাস করে আসছে।
শুধু আজ নয়, সুদূর প্রাচীনকাল থেকেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের নজিরটি এ দেশ বহন করছে। খেতে- খামারে, কলে-কারখানায়, অফিস-আদালত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নানা সম্প্রদায় কাজ করেছে। একে অন্যের দুঃখে-আনন্দে শরিক হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে গভীর সংহতি ও ঐক্য জাতীয় ইতিহাসে গৌরবময় ঐতিহ্য ও ইতিহাস হয়ে আছে। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধ তারই স্বাক্ষর। ১৯৭১ সালে এদেশের হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ দেশ হিসেবে ঘোষিত হয়। আমরা তাই গৌরবান্বিত। জাতীয় উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এ সম্প্রীতি সংরক্ষণের পরিস্থিতিটি খুবই উপযোগী। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশ একটি উদাহরণ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মহান মন্ত্রে দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল। জাতীয়তাবোধের দৃঢ়বন্ধনে তারা আবদ্ধ।
মানুষ আজ আর বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে পারে না। তার মঙ্গল নিহিত রয়েছে বিশ্বজনীন শান্তি ও সম্প্রীতির মধ্যে। বর্ণভেদ, ধর্মভেদ, সাদা-কালোর দম্ভ আজকের পৃথিবীতে স্থান পেতে পারে না। শ্বেতাঙ্গ আমেরিকানদের পাশাপাশি আজ কৃষ্ণাঙ্গ নিগ্রো জাতি তার আপন অবস্থানের স্বীকৃতি আদায় করে নিচ্ছে, আমরা আজ এ সত্যের স্বীকৃতি দিতে বাধ্য।
সাম্প্রদায়িকতা এক দুরারোগ্য ব্যাধি। এই ব্যাধির জীবাণু জাতির জীবনের গভীরে প্রোথিত। শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্খলার কঠোরতার মধ্যেই এর সমাধান সূত্র নেই। তরুণ শিক্ষার্থীরাই হল দেশের সবচেয়ে আদর্শপ্রবণ, ভাবপ্রবণ অংশ। ছাত্র-সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ, জাতির কাণ্ডারী। তাদের মধ্যে আছে অফুরান প্রাণশক্তি। পারস্পরিক শ্রদ্ধার মনোভাব, আন্তরিক মেলামেশা, ভাবের আদান-প্রদানের মধ্য দিয়ে অভ্যুদয় হবে এক নতুন প্রজন্মের। এরই মধ্য দিয়ে ছাত্ররা নতুন করে অনুভব করবে মানবতার উদার মহিমা। শুনবে সেই মহামিলনের মন্ত্র। ছাত্রাবস্থায়ই সাম্প্রদায়িকতার রাহু মুক্তির শপথ নিতে হবে। সম্প্রীতির মহাব্রত অনুষ্ঠানের তারাই হবে প্রধান পুরোহিত। শুধু পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়া নয়, সুকুমার বৃত্তিগুলো যথাযথ বিকশিত হলেই তাদের শিক্ষার পূর্ণতা, সার্থকতা। মনুষ্যত্বের অধিকার অর্জনই হবে তাদের শিক্ষানুশীলনের পরম প্রাপ্তি। শিক্ষার নিবেদিত প্রাঙ্গণে তারা নতুন করে উপলব্ধি করবে সবার উপরে মানুষই সত্য। মানুষে মানুষে প্রীতি-বন্ধনই হবে তার শেষ কথা।
সাম্প্রদায়িকতা বিশ্ববিবেকের কাছে নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য বিষয়। মানবকল্যাণ পরিপন্থী এবং সভ্যতাবিধ্বংসী সাম্প্রদায়িকতা বেশি দিন স্থায়ী হতে পারে না। আমরা যদি একটু সচেষ্ট হই তাহলে এ হানাহানি সমাজ থেকে নির্মূল করা অবশ্যই সম্ভব হতে পারে। এ বিষবাষ্প অপসারিত হলেই মানবসমাজে সম্প্রীতির শান্তির হাওয়া বইবে এবং ‘মানুষ মানুষের জন্য’ কথাটি সার্থকতা পাবে। আমাদের জীবন হয়ে উঠবে আরো সুন্দর, আরো সুখময়। বিশ্বের বুকে একটি সত্য ও আদর্শ জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পাব আমরা।

আরও পড়ুন