ছিন্ন মুকুল কবিতা | Chhinno Mukul | সত্যন্দ্রনাথ দত্ত

সত্যন্দ্রনাথ দত্ত

ছিন্নমুকুল

সবচেয়ে যে ছোট্ট পিঁড়িখানি

সেইখানি আর কেউ রাখে না পেতে

ছোট থালায় হয় নাকো ভাত বাড়া

জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে;

বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট

খাবার বেলায় কেউ ডাকে না তাকে,

সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল

তারি খাওয়া ঘুচেছে সব-আগে।

সবচেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি

খুশি ছিল ঘেঁষাঘেঁষির ঘরে,

সেই গেছে, হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে,

দিয়ে গেছে জায়গা খালি করে।

ছেড়ে গেছে পুতুল, পুঁতির মালা,

ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি;

ভয়-তরাসে ছিলো যে সবচেয়ে

সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি।

চলে গেছে একলা চুপে চুপে-

দিনের আলো গেছে আঁধার ক’রে;

যাবার বেলা টের পেলো না কেহ,

পারলে না কেউ রাখতে তারে ধ’রে।

চলে গেলো, – পড়তে চোখের পাতা,-

বিসর্জনের বাজনা শুনে বুঝি!

হারিয়ে গোলো- অজানাদের ভিড়ে,

হারিয়ে গেলো – পেলাম না আর খুঁজি।

হারিয়ে গেছে- হারিয়ে গেছে, ওরে!

হারিয়ে গেছে বোল-বলা সেই বাঁশি

হারিয়ে গেছে কচি সে মুখখানি,

দুধে-ধোওয়া কচি দাঁতের হাসি।

আঁচল খুলে হঠাৎ স্রোতের জলে

ভেসে গেছে শিউলি ফুলের রাশি,

ঢুকেছে হায় শ্মশানঘরের মাঝে

ঘর ছেড়ে তাই হৃদয় শ্মশান-বাসী।

সব-চেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি

সেগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে,

যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট

আজকে সেটি শূন্যে পড়ে কাঁদে,

সব-চেয়ে যে শেষে এসেছিলো

সে গিয়েছে সবার আগে সরে

ছোট্ট যে জন ছিলো রে সব চেয়ে

সে দিয়েছে সকল শূন্য করে।

আরও পড়ুন