কোভিড ১৯ রচনা
কোভিড-১৯ অতিমারী আক্রান্ত বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা: উত্তরণ কৌশল
করোনাভাইরাস, যার পোশাকী নাম কোভিড-১৯ সেই রোগটি জানুয়ারি ২০২১ নাগাদ বিশ্বের ১৯১ দেশ ও বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস যা মানুষের ফুসফুসের মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করে- যা পূর্বে বিজ্ঞানীদের অজানা ছিল- চীন থেকে ছড়িয়ে পড়েছে। ২০০২ সাল থেকে চীনে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া সার্স (পুরো নাম সিভিয়ার এ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম) নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৭৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল আর ৮০৯৮ জন সংক্রমিত হয়েছিল। সেটিও ছিল এক ধরনের করোনাভাইরাস। নতুন এই রোগটিকে প্রথমদিকে নানা নামে ডাকা হচ্ছিল, যেমনঃ ‘চায়না ভাইরাস’, ‘করোনাভাইরাস’, ‘২০১৯ এনকভ’, নতুন ভাইরাস’, ‘রহস্য ভাইরাস’ ইত্যাদি । ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোগটির আনুষ্ঠানিক নাম দেয় কোভিড-১৯ যা ‘করোনাভাইরাস ডিজিজ ২০১৯’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে এতো বড় বিপর্যয়ে পৃথিবী আগে কখনো পড়েনি। ক্ষুদ্র এক ভাইরাস মোকাবেলায় যখন বিশ্বের একের পর এক বড় বড় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সামনে মহামারী থেকে মুক্তি পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা অনেক ধরনের সমাধানের পথ বাতলে দিচ্ছেন। উত্তরনের কৌশল :
১) শারীরিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণের ভিত্তিতে সব কর্মীদের সচেতন করে তোলা। কাজের সময়ে যে সকল স্বাস্থ্যবিধি এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা জরুরী, সকল কর্মীর জন্য সে বিষয়ক প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা নিয়োগকর্তার একটি প্রধান দায়িত্ব।
২) মাস্ক ব্যবহারের অভ্যাস গড়ে তোলাঃ সর্বক্ষেত্রে সকল শ্রমিকদের জন্য যথাসম্ভব মাস্ক ও হ্যান্ডগ্লাভস সহজলভ্য করতে হবে। এই জিনিসগুলো একটি স্বল্প আয়ের দেশের জন্য খুব একটা ব্যয়সাপেক্ষ হওয়ার কথা না তাই সহজেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে এর জন্য সঠিক পরিকল্পনা, প্রস্তুতি এবং একই সঙ্গে এগুলোর সঠিক ব্যবহারের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
৩) কর্ম পরিবেশ পরিবর্তনঃ যেখানে প্রয়োজন, সুস্পষ্ট এবং সহজবোধ্য নির্দেশিত দিতে হবে, যেমনঃ দেয়াল ও মেঝেতে ছবি এঁকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে।
-শিফটের শুরুতে বা শেষে কর্মীদের চলাচল এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ দূরত্ব বজায় রাখতে পারে।
-কর্মীদের সীমানা নির্ধারণ করে দেওয়া যেতে পারে, যাতে তাদের চলাফেরা শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সী থাকে।
– সম্ভব হলে ব্যারিকেড ব্যবহার করে কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের আলাদা রাখার চেষ্টা করতে হবে।
– পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রবেশ ও প্রস্থানের ব্যবস্থা থাকতে হবে যাতে খুব বেশি ভিড় না হয়।
– দোকানপাটে একমুখী চলাচলের নিয়ম এবং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। দোকান (যেমন সুপারশপ) ও রেস্তোরাতে একসাথে নির্দিষ্টসংখ্যক গ্রাহকের বেশী প্রবেশের অনুমতি দেয়া যাবে না। কাউন্টারে কাঁচ, থাই অ্যালুমিনিয়ামের (ন্যূনতম পলিথিনের) প্রতিবন্ধক স্থাপন করা যেতে পারে ।
৪) শ্রমিকদের সীমিতভাবে কাজ করার সুবিধা প্রদানঃ বিশাল কর্মীবহর কিন্তু সীমিত জায়গা- এরকম কারখানায় পদ্ধতিটি সংক্রামণের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। তবে এর ফলে কারখানার সামগ্রিক উৎপাদন কিছুটা কমে যাবে, শ্রমিকদের আয়ও কিছুটা হ্রাস পেতে পারে। তবে এই ব্যবস্থা অন্তত মন্দের ভালো। দীর্ঘমেয়াদী লকডাউন যেমন খারাপ তেমনি শারীরিক দূরত্ব বজায় না রাখায় হঠাৎ প্রচুর সংখ্যক কর্মী একই সময়ে অসুস্থ হয়ে পুরো কারখানাটি বন্ধ হওয়াও কাম্য নয়। এরকম অবস্থায় এই পদ্ধতিটি ভারসামা নিয়ে আসতে পারে।
৫) সকল শ্রমিকের জন্য পর্যাপ্ত পানি, সাবান ও সাধারণ স্যানিটেশন সুবিধা নিশ্চিত করা এবং জীবাণুনাশক সরবরাহ করা। কর্মক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সব সময় মেনে চলতে হবে।
৬) “স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা” বিষয়গুলো নিশ্চিতকরণে কর্মকর্তা নিয়োগ।
উপরের সমস্ত পদক্ষেপগুলি যথাযথভাবে প্রয়োগ করা ও নিয়মিতভাবে তা মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার জন্য একটি পদ তৈরি করা যেতে পারে। একটি সুস্পষ্ট জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, এবং লকডাউন তুলে নেওয়ার আগে এই নীতিমালা কঠোরভাবে মানার ব্যাপারে সব ব্যবসায়ীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।