তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা ২০ পয়েন্ট

শিক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্যই হলো শিক্ষার্থীদেরকে যুগোপযোগী জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করে তাদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করা। প্রযুক্তিগত কৌশলে শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ ভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চারপাশেই প্রযুক্তি ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ব্যবহার ছাড়া সমাজে চলাফেরা করা অনেকটা দুর্বিষহ বলা যায়।
UNESCO কর্তৃক গঠিত Information and Communication on Education for Twenty-Fast Century এর একটি প্রতিবেদনে তথ্য প্রযুক্তি বা আইসিটিকে একবিংশ শতাব্দির জন্য আবশ্যকীয় দক্ষতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাই শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিত করণে পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশেই সরকারি-বেসরকারি ভাবে বিভিন্ন প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে শিক্ষা কার্যক্রমে আইসিটি ভিত্তিক পড়াশোনা চালু করা হয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যৎ কর্মজীবনে তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবে।
তথ্য প্রযুক্তি বলতে বোঝায় তথ্য সংগ্রহ, সংস্করণ, বিশ্লেষণ, প্রক্রিয়াকরণ, উৎপাদন ও যোগাযোগের কাজে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগত সকল উপকরণ।
তথ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিনিয়তই নতুন নতুন প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হচ্ছে, তবে বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত উপকরণগুলোর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, স্যাটেলাইট, মাল্টিমিডিয়া, টেলিভিশন ও রেডিও ইত্যাদি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার মূলত হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার সম্পর্কিত জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের ওপর গুরুত্ব আরোপ করাকে বোঝায়।
বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির সম্ভাবনা প্রবল। আমরা যদি কর্মক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার প্রোপারলি করতে পারি তবে তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে আমাদের দেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
দিন দিন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতির ফলে আমাদের সমাজের ব্যপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে বলতে গেলে আমরা প্রতি মিনিটেই প্রযুক্তির ব্যবহার করছি। সমাজের অগ্রযাত্রায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ভূমিকা কত বেশি তা সংক্ষিপ্ত আকারে বলা মুশকিল। বিশ্বের যে সকল দেশ সবচেয়ে বেশি উন্নত তাদের প্রযুক্তির ব্যবহার সবেচেয়ে বেশি। এখন বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও আইসিটির বহুমুখী ব্যবহার করা হচ্ছে।
তাই এখন বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হচ্ছে। একুশ শতকের সম্পদ হচ্ছে জ্ঞান। যার অর্থ কৃষি, খনিজ সম্পদ কিংবা শক্তির উৎস নয়, শিল্প কিংবা বাণিজ্যও নয়, এখন পৃথিবীর সম্পদ হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
এখন আমাদের প্রয়োজনীয় সকল কাজের পাশাপাশি প্রযুক্তি ব্যবহারে যথেষ্ঠ দক্ষতা অর্জন করা প্রয়োজন। তাছাড়া ভবিষ্যত পৃথিবীর অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলা সম্ভব নয়।
একজন শিক্ষার্থী যতক্ষণ প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত না হবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, মূল্যায়ন, সংযোজন করে নতুন তথ্য সৃষ্টি করতে পারবে না। এই দক্ষতা অর্জন করতে না পারলে সে একুশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে জ্ঞান ভিত্তিক সমাজে স্থান করে নিতে পারবে না।
তাই নিচে আমি টেকনোলোজি ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করতে চলেছি।
তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে একজন কর্মী অনেক বেশি দক্ষ হয়ে ওঠে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই স্বল্প কর্মী দিয়ে বেশি কাজ করিয়ে নিতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।

অন্যদিকে আইসিটির কারণে অনেক কাজের ধরন প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-

যোগাযোগ প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় প্রণোদনা হলো এর মাধ্যমে নিত্যনতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হয়। ফলে অনেক বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হয়।
শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব রয়েছে। একটি সময় ছিল, যখন শিক্ষার্থী কোনো বিষয় জানার প্রয়োজন হতো তখন ব্যক্তি বা বইয়ের ওপর পুরোপুরি ভাবে নির্ভর করতে হতো।
অনেক ক্ষেত্রে জানার বিষয়গুলো আজীবন অমিমাংশিতই থেকে যেতো। যেই বিষয়ে জানা যেতো, তাও ছিল সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু প্রযুক্তি আসার পর সকল অনিশ্চয়তা কাটিয়ে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের জ্ঞানভান্ডার শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রমে নিয়ে এসেছে সহজলভ্যতা। সেই সাথে তৈরি হয়েছে অপার সম্ভাবনা।
প্রযুক্তি ভিত্তিক পড়াশোনা মূলত সামাজিক জীবনে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনেক এগিয়ে রাখে। তাছাড়া, Teaching-Learning কার্যক্রমকেও আকর্ষণীয় ও কার্যকর করার এক অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করেছে আইসিটি।
গবেষণায় দেখা গেছে প্রযুক্তি ব্যবহারে শিক্ষা উপকরণ গতানুগতিক শিক্ষা উপরকণের চেয়ে অনেক বেশি সহজ ও কার্যকর।
শিক্ষকগণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদেরকে সফলভাবে পাঠদান করতে পারেন।
আবার শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ ও বইয়ের সীমানা ছাড়িয়ে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (WWW) ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞানের তথ্য সহজেই জানতে পারে।
এতে করে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জন অনেক বেশি সহজ হয়। তাছাড়া, প্রযুক্তি নির্ভর পড়াশোনা অনেকটা কর্মমুখী, যা শিক্ষার্থীদেরকে ক্যারিয়ার জীবনে উদ্যোক্তা হিসেবে প্রস্তুত করতে অনুপ্রাণিত করে।
একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষাক্ষেত্রে যেই প্রযুক্তি গুলো ব্যবহার করে তারমধ্যে রয়েছে-

এগুলো ছাড়াও শিক্ষাক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। তবে শিক্ষার্থীরা ব্যবহারের দিক দিয়ে উপরোল্লিখিত প্রযুক্তি গুলোই বেশি ব্যবহার করে।
শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অবদান অনস্বীকার্য। জীবনযাপনে সহজলভ্যতা আসার পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়।
একজন মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি ভিত্তিক শিক্ষাক্রমের উদ্দেশ্য গুলো হলো:-
শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার যদি নিশ্চিত করা যায়, তবে উপরোল্লিখিত বিষয় গুলো একজন শিক্ষার্থীকে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।
তাই শিক্ষক, শিক্ষা কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থী সবাইকেই গুরুত্বের সাথে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ভিত্তিক পড়াশোনাকে গ্রহণ করা উচিত।
শিক্ষায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার্থীদেরকে সহজেই সমৃদ্ধ করে। তবে শিক্ষাজীবনে প্রযুক্তির অপব্যবহার শিক্ষার্থীদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।
প্রযুক্তির খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো ইন্টারনেট। বর্তমান সময়ে শিক্ষায় ইন্টারনেটের ব্যবহার ও গুরুত্ব অপরসীম।
তবে অধিকাংশ শিক্ষার্থী শিক্ষার প্রয়োজন বা জ্ঞানার্জনের লক্ষ্য ব্যতীত অধিক সময় বিনা প্রয়োজনে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। কম্পিউটার ও মোবাইল ব্যবহার করার ক্ষেতেও তাই ঘটে।
প্রযুক্তি ব্যবহারের বিভিন্ন ভালো দিক থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ হারানোর কারণ হয়ে যায় প্রযুক্তি।
এজন্য শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ করতে হবে। তাইলেই শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সমৃদ্ধ করবে।
আধুনিক বিশ্বের প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করার বিকল্প নেই। তবে শিক্ষার মাধ্যমেই কেবল প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়, বরং তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান উন্নত করতে হবে।
বিশেষ করে প্রযুক্তি ব্যবহারে কর্মমুখী শিক্ষা দেওয়া উচিত। যেমন প্রযুক্তিগত হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার বিষয়ে। তাহলে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

আরও পড়ুন