উয়ারী বটেশ্বর রচনা
বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাস রচনায় উক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তথা উয়ারী-বটেশ্বর বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এখানে নগর সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। নগর সভ্যতা সুশৃঙ্খল প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধার অস্তিত্বকে প্রমাণ করে। অর্থাৎ- আড়াই হাজার বছর আগেই এ অঞ্চলের মানুষ জীবন- যাপনের দিক থেকে নাগরিক উৎকর্ষের পরিচয় রেখেছিল। আমরা জানি, বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর জীবন-জীবিকার সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে লাঙল। উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত সবুজ কাচের গুটিকায় লাঙল প্রতীক উৎকীর্ণ থাকায় বোঝা যায় যে, সে সময়ের কৃষিজীবী সমাজের জীবনাচরণ ও ধর্মাচরণ একই সেতুবন্ধনে আবদ্ধ ছিল। কেননা দেবতা শীব বা বলরামের প্রধান প্রতীক হচ্ছে ‘হল’ বা ‘লাঙল’। এখানে প্রাপ্ত ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা ও মুদ্রাভাণ্ডার প্রমাণ করে যে, এ অঞ্চলে মুদ্রানির্ভর অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল। বিভিন্ন ধরনের মুদ্রা পাওয়ায় এটাও বোঝা যায় যে, উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে আন্তঃ ও বহির্বাণিজ্যের প্রচলন ছিল। উয়ারী-বটেশ্বরে প্রাপ্ত পাথর ও পোড়ামাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের পুঁতি দেখে ধারণা করা হয়, সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষ পাথরের এবং নিম্ন শ্রেণির লোকেরা পোড়ামাটির পুঁতি অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করত। অর্থাৎ- সমাজে সামাজিক স্তরবিন্যাসের অস্তিত্ব ছিল। এখানে প্রাপ্ত আশ্রাফপুর তাম্রশাসনের মাধ্যমে জানা যায়, জমিতে ব্যক্তি মালিকানা ছিল। এছাড়া উয়ারী-বটেশ্বরে বাটখারা পাওয়ায় বোঝা যায়, এ অঞ্চলের মানুষের পরিমাপ বিষয়ে জ্ঞান ছিল।
উপরের আলোচনার পরিসমাপ্তিতে বলা যায়, উয়ারী-বটেশ্বরে আবিষ্কৃত বিভিন্ন ধরনের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সহায়তায় যেমন সে সময়ের মানুষের সামাজিক জীবন সম্পর্কে ধারণা করা যায় তেমনি বর্তমান বাংলাদেশের সমাজজীবন কীভাবে গড়ে উঠেছে সে বিষয়েও জ্ঞান অর্জন হয়। বস্তুত বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাস রচনায় উয়ারী-বটেশ্বর একটি মাইলফলক।