মাতৃভূমি রচনা
মা, ভাষা ও মাতৃভূমি
ভূমিকাঃ মানুষের অস্তিত্বের প্রধান তিনটি অবলম্বনই হচ্ছে মা, ভাষা আর মাতৃভূমি। মা, মাটি ও মাতৃভাষা একই সূত্রে গাঁথা। পৃথিবীতে মা একজনই যিনি আমাদের শক্তি, সাহস আর আশ্রয়ের ঠিকানা। যার ভালোবাসার ছোঁয়ায় আমরা বেড়ে উঠি। মানুষের সেরা উপহার মা। যার চোখে আমরা স্বপ্ন দেখি, যাকে নিয়ে আমরা আমাদের পৃথিবী সাজাই। মায়ের শেখানো ভাষাই আমাদের মাতৃভাষা আর মায়ের কোলে আমরা যেখানে জন্ম নেই সেটাই আমাদের মাতৃভূমি।
মমতাময়ী মাঃ মা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য একটি প্রচণ্ড আকর্ষণীয় স্নেহময়ী ও আবেগময় শব্দ। মায়ের মধ্যেই সন্তানের অস্তিত্ব নিহিত। মা মানেই একটি মায়াবী স্নেহময়ী অবস্থান। মা সম্পর্কে বাংলা সাহিত্যে একটি কথা প্রচলিত আছে “কুপুত্র যদি বা হয়, কুমাতা কখনো নয়”। অর্থাৎ মায়ের অবস্থানটি অত্যন্ত সহনশীল ও স্নেহময়ী। সন্তানেরা মায়ের সাথে অসদাচরণ করলেও মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করে না। সন্তানকে দুটো ভালো খাওয়াতে পারলে কিংবা পরাতে পারলে মায়ের সুখের সীমা থাকে না। সন্তানের অমঙ্গল হলে মা হয়ে পড়ে পাগলপ্রায়। সন্তান বড় হলে, নিজের পায়ে দাঁড়ালে, সুখী হলে মাতৃত্বের সার্থকতায় মায়ের মন ভরে উঠে।
ভাষাঃ আমাদের হাসি-আনন্দ, সুখ-দুঃখ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আকুলতা-ব্যাকুলতা সবকিছু প্রকাশের মাধ্যম আমাদের মাতৃভাষা। এই ভাষার মাধ্যমেই আমরা শৈশব থেকে আমাদের ভাব বিনিময় করতে শিখি। এই ভাষার মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞান, শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন করে । এই ভাষার মাধ্যমেই মানুষ নিজের আবেগ অনুভূতি, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও চিন্তা অন্যের নিকট পৌছে দেয়।
সাধারণত নিম্ন জাতি প্রভাবশালী জাতির ভাষা, কৃষ্টি, কালচারে প্রভাবিত হয়। পরাজিত জাতি বিজয়ী জাতির ভাষা গ্রহণ করে আবার বিজয়ী জাতি পরাজিত জাতির ভাষাও গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে ভাষার সংমিশ্রণ ঘটে এবং নতুন ভাষার সৃষ্টি হয়। এভাবেই যুগে যুগে বিভিন্ন জনপদে অজস্র ভাষার উদ্ভব ঘটেছে।
মায়ের সঙ্গে যেমন সন্তানের সম্পর্ক, মাতৃভাষার সঙ্গেও মানুষের সম্পর্ক তেমনি গভীর। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মানুষ বর্তমানে বিদেশী ভাষায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। বিদেশী ভাষাই এদের ধ্যান-জ্ঞান। এরা হয়তো জানেও না যে, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ যখন বিদেশী ভাষার দাসত্ব ছেড়ে নিজেদের ভাষার চর্চা আরম্ভ করেছে তখনই তাদের উন্নতির শুরু হয়েছে।
মাতৃভূমিঃ মা ও মাতৃভাষার মতো মাতৃভূমিও আমাদের অস্তিত্বের অবিচ্ছেদ্য অংশ। মায়ের পেট থেকে বের হয়ে পৃথিবীর আলো দেখার মুহূর্ত থেকেই মাতৃভূমির মাটিতে আমাদের বেড়ে ওঠা। মাতৃভূমির প্রকৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে আমরা ধারণ করি। মাতৃভূমির জন্য আমাদের যে ভালোবাসা তা সহজাত ও স্বাভাবিক। মাতৃভূমির সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আমাদের প্রয়োজনে নিজের জীবনও বিলিয়ে দেওয়া উচিত।
উপসংহারঃ জন্ম গ্রহণ করার পর আমরা যথার্থ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠি মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার মাধ্যমে। আমাদের জীবনে এদের দান অপরিসীম এবং এদের ঋণ কখনো পরিশোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের সকলের উচিত শ্রম ও মেধা দিয়ে মা, মাতৃভূমি ও মাতৃভাষার কল্যাণ করা।