দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রচনা

প্রতিবেদনের প্রকৃতি: সংবাদ প্রতিবেদন
প্রতিবেদনের শিরোনাম: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষ দিশেহারা
সরেজমিনে তদন্তের স্থান: ‘ক’, ‘খ’ ও ‘গ’ বাজার পরিদর্শন
প্রতিবেদন তৈরির সময় সকাল ১০:০০টা বিকাল ৫:০০টা
তারিখ: ১০-০৩-২০২৩
সংযুক্তি: এ কপি ছবি (‘ক, ‘খ’ ও ‘গ’ বাজারের চিত্র)
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি: সাধারণ মানুষ দিশেহারা
নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজারে প্রতিনিয়ত মূল্যবৃদ্ধি ঘটেই চলছে। এ যেন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সাধারণ জনগণ নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী শ্রেণির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এদিকে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টি না থাকায় ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি দ্রব্যের মূলা কেজিতে তিন হতে দশ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচাবাজারে সবজির পর্যাপ্ত যোগান থাকা সত্ত্বেও দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। শীত শেষে সবজির দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। করল্য ৪০/৫০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০/৭০, লাউ ৩০/৪০, আলু ২০/৩০, বরবটি ৩০/৪০, টমেটো ৩০/৩৫, লেবু ১ হালি ২০/৩০, বেগুন ৪০/৫০, কাঁচামরিচ ১০০/১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। উৎপাদক পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি দ্রব্যই কৃষকের বিক্রীত মূল্যের ৪/৫ গুণ অধিক মূল্যে ভোক্তা সাধারণ ক্রয় করছে। এ ব্যাপারে খুচরা বিক্রেতাদের সাথে কথা বললে তারা জানান, তাদের চড় দামে পাইকারদের নিকট হতে কিনতে হচ্ছে। পাইকাররা দাম বৃদ্ধির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিজনিত পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি, বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়, যানজটের কারণে দ্রুত পচনশীল সবজি নষ্ট হওয়া ইত্যাদি বিষয়কে দায়ী করেন।
মুদি-মনিহারি দ্রব্যের দোকানে গিয়ে দেখা যায় তেল, আটা, ময়দা ইত্যাদির দাম প্রতি কেজিতে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে পনেরো হতে বিশ টাকা পর্যন্ত। সয়াবিন তেল ৮৫-৯০৫ টাকা, চিনি ৫০-৬০, মসুর ডাল ১২০-১০০, আটা ৫০-৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা চালের দাম কিছুটা কমলেও চিকন চালের দাম বেড়েছে। গুড়, গুঁড়োদুধ ও শিশু খাদ্যের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে গড়ে ১৫ শতাংশ বেড়েছে। ডিম, মুরগি, মাছের দামও সাধারণ মানুষের জন্য অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মুদি মনোহারি দ্রব্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির জন্য সরকারের যথাযথ তদারকির অভাব, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক বাজারে ঊর্ধ্বগতি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, অসাধু ব্যবসায়ীদের বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা ইত্যাদি কারণ দায়ী। কয়েকজন ভোক্তার সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে প্রচণ্ড চাপ সৃত্রী করেছে। একজন রিকশাচালক অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে জানান, তার সারা দিনের আয়েও পরিবারের জন্য দুবেলা দু’মুঠো ভাতের সংস্থান হচ্ছে না। এভাবে ক্রমাগত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জন্য এ ব্যয় নির্বাহ কর অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে টিসিবি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলো সরাসরি দায়ী করেন। টিসিবির পরিচালক জানান, দ্রুত টিসিবির মাধ্যমে তেল, চিনি, জল প্রভৃতি ভোগ্যপণ্য আমদানি করে রাজধানীসহ সকল বিভাগীয় শহরে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয়ের মাধ্যমে বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে সরকার। এছাড়া আসন্ন ধান-চাল সংগ্রহের মৌসুমে স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহের মাধ্যমে খাদ্য মজুদ বৃদ্ধিতে সরকার চেষ্টা করছে বলে জানান। তিনি আরও বলেন, সরকার শীঘ্রই বাজার মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট ব্যবস্থা পুনরায় চালু করবে।
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে করণীয়:
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ক্রমান্বয়ে একটি জাতীয় সমস্যায় পরিণত হচ্ছে। এ সমসয়র সমাধানকল্পে সকলের সম্মিলিত প্রয়াস অত্যাবশ্যক। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে নিয়ে ধারণা দেওয়া হলো-
১. দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে অন্যতম কার্যকরী পদক্ষেপ হলো মজুতদারি, সিন্ডিকেট ও কালোবাজারি শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করা। অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্রকে শনাক্ত করে শাস্তির আওতায় আনতে পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।
২. বাজারে গ্রাহকের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের যোগান নিশ্চিত করতে পারলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
৩. বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
৪. কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটিয়ে অধিক উৎপাদনশীল ফসল ফলাতে হবে।
৫. কল-কারখানার উৎপাদন ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি যেন বাধাহীন হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৬. দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে বাজার ব্যবস্থার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকা সবচেয়ে জরুরি। এতে ব্যবসায়ীদের ওপর কড়া নজরদারি রাখতে হবে এবং দ্রব্যমূল্য যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে সে বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।
এসব বিষয়ে প্রতি মনোযোগী হয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারলেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন