নৈতিকতা ও মূল্যবোধ রচনা

নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ
ভূমিকাঃ নৈতিকতার সঙ্গে মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিনের ছোট ছোট কথা, ছোট ছোট ব্যবহার, হাসি-রহস্য, একটুখানি সহায়তা, একটু স্নেহের বাক্য, অসহায়ের প্রতি একটুখানি দয়া প্রদর্শন, নম্রতা প্রকাশ, সৌজন্যতা প্রকাশ ইত্যাদির মাধ্যমেই মানুষের নৈতিক শিক্ষা বিকশিত হয়। জন্মগত ভাবে ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচিতি পেলেও ‘মনুষ্যত্ব’ অর্জন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। ‘Morality is a Particular System of Values and Principles of Conduct.
নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধঃ নীতিবিষয়ক যে শিক্ষা, তা-ই নৈতিক শিক্ষা। সাধারণত ধর্ম বিষয়ক শিক্ষাগুলো নৈতিক শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত কোনো সমাজের অন্তর্ভুক্ত সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কল্যাণকর ও কাঙ্ক্ষিত স্থায়ী বিশ্বাস বা আদর্শকে মূল্যবোধ বলা হয়। মূল্যবোধ ও শিক্ষার মধ্যে অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক বিদ্যমান। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার মাধ্যমেই মানুষ মূল্যবোধ সম্পন্ন ও সুনাগরিক হয়ে ওঠে। নৈতিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে কোনো একটি সমাজ-স্বীকৃত আদর্শের পথে পরিচালিত করে তার চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করা। নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মূল্যবোধের প্রত্যয়টি স্থায়ী হয়। এবং সমাজ, দেশ ও মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার স্পৃহা তৈরী হয়। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের কারণে সমাজের সার্বিক কল্যাণ সাধিত হয় এবং শৃঙ্খলা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।
সমাজে নৈতিক শিক্ষার প্রভাবঃ নৈতিক আদর্শ সম্বলিত সমাজে কোনো অনাচার থাকে না। ঘুষ, দুর্নীতি, বঞ্চনা, শোষণ, স্বার্থপরতা এসব থেকে সমাজ মুক্ত থাকলেই তাতে নৈতিকতার আদর্শ প্রতিফলিত হয়। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধ মানুষকে মনের দিক থেকে সম্পদশালী করে তোলে। নৈতিক শিক্ষার বলে বলীয়ান হয়ে একজন মানুষ হয়ে ওঠে সকল প্রকার কলুষমুক্ত। নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষ সত্যকে সত্য বলে চিনতে পারে, মিথ্যাকে মিথ্যা বলে স্বীকৃতি দেয়, যা তার নৈতিক মূল্যবোধেরই ফল।
নৈতিক শিক্ষার মাধ্যমঃ নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা শুরু হয় পরিবার থেকে। একটি শিশুকে মূল্যবোধ শিখাতে হয় নানা ভাবে। নেপোলিয়ান বলেছিলেন, “আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব”। কিন্তু বর্তমান সময়ে শিক্ষিত মা পাওয়া গেলেও নৈতিক ও আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত সন্তানের খুব অভাব। তাই শিশুকে নৈতিকতার শিক্ষা দেওয়া উচিত পরিবার থেকে। শিশুকে নানা ভাবে নৈতিকতা শিক্ষা দিতে হবে। সালাম দেওয়া, বিদায় নেওয়ার সময় শুভ কামনা করা, ধন্যবাদ জানানো, দুঃখ প্রকাশ করা, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা, অন্যকে অন্যায়ভাবে না মারা, অন্যকে ক্ষমা করতে শেখা, দয়া করা, দান করা, আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম ইত্যাদি শিক্ষা দেওয়া পরিবারের প্রধান কাজ।
নৈতিক শিক্ষার অভাবে সমাজের প্রভাবঃ নৈতিকতার অভাব থাকলে মানুষ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে। নৈতিকতার অভাবে শিক্ষা গ্রহণ করেও নানা অপকর্মে মানুষ জড়িয়ে পড়ে। মানুষ মানবতা ভুলে নিজের পশুত্বকে জাগিয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। প্রখ্যাত ব্রিটিশ কবি ও ঔপন্যাসিক স্যার উইলিয়াম গোল্ডিং বলেছেন, “মানুষের আদিমতা ও হিংস্রতা সহজাত, সেরকম বুনো পরিবেশ পেলে মানুষ তার সভ্যতার লেবাস খুলে হিংস্র হয়ে ওঠে”। আমাদের সমাজে মূল্যবোধ শিক্ষার অভাবে ব্যাপক অবক্ষয় শুরু হয়েছে। চারদিকে কেবল অন্যায় করার প্রতিযোগিতা। অন্যায় করে কে কত বড় হতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় উন্মাদ হয়ে ছুটছে মানুষ। বর্তমানে সবকিছুতেই শুধু ভেজাল আর ভেজাল। মিথ্যাচার, আদর্শহীনতা, উচ্ছৃঙ্খলা, ঘুষ, জালিয়াতি, রাহাজানি প্রভৃতি সমাজ বিরোধী কার্যকলাপে এখন সমাজ নিমজ্জিত মূল্যবোধ শিক্ষার অভাবে।
উপসংহারঃ সমাজকে বিশৃঙ্খলার হাত থেকে মুক্ত করতে হলে এখনকার শিশুদেরকে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের সামনে রাখতে হবে নৈতিক মূল্যবোধের আদর্শ। সত্য ন্যায় ও সুন্দরের প্রতি তাদের ভালোবাসা জাগাতে হবে। নৈতিক মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় এখন আমাদের সবাইকে সচেতন, উদ্যোগী ও সক্রিয় হতে হবে।

আরও পড়ুন