বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রচনা

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি এই বাংলাদেশ। অপরুপা এ দেশের সবুজ বন বনানী, সুবিশাল ম্যানগ্রোভ বনরাজি, নদনদী, শ্যামল পাহাড়, বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত, প্রাচীন ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ যুগ যুগ ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ভ্রমণ পিপাসু উৎসাহী মানুষকে আকৃষ্ট করে আসছে। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে দু’চোখ ঝুড়িয়ে যায়। তাই রূপমুগ্ধ, বিষয়-পুলকিত কবি তার আবেগ- স্নিগ্ধ উচ্চারণে বাংলাকে বলেছেন- ‘রূপসি বাংলা’। ছয় ঋতুর দেশ এই রুপসি বাংলাদেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইল দেশটি যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক মিউজিয়াম। সবুজ শ্যামল প্রকৃতির জন্যে এর প্রশংসা যুগ যুগ ধরে কবিদের বাণীতে উচ্চারিত হয়েছে। তাইতো কবি বলেন-
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো
তুমি সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ। বাংলাদেশের মাঝামাঝি স্থান দিয়ে কর্কটক্রান্তি রেখা চলে গেছে। এজন্য বাংলাদেশের জলবায়ু মোটামুটি সমভাবাপন্ন। মৌসুমি বায়ুর প্রভাব দেশের জলবায়ুর ওপর এত বেশি যে সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু নামে পরিচিত। বিভিন্ন ঋতুতে জলবায়ুর কিছুটা তারতম্য লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪° সেলসিয়াস এবং শীতকালীন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ০৭° সেলসিয়াস। এ দেশের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের গড় ২০৩ সেন্টিমিটার। পশ্চিমাংশ অপেক্ষা পূর্বাংশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। বর্ষাকালে আমাদের দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বাংলাদেশের মোট বৃষ্টিপাতের পাঁচ ভাগের চার ভাগই বর্ষাকালে হয়ে থাকে। শীতকালে উত্তর-পূর্ব শুষ্ক মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় বলে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। বাংলাদেশের উত্তরে ভাওয়াল ও মধুপুর গড়। গেরুয়া রঙের মাটিতে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গজারি গাছ। দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর আর সুন্দরবন।
পূর্বে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সাজানো চা-বাগান। এরই মাঝে বিশাল সব ছায়াবৃক্ষ। পশ্চিমে ধু-ধু প্রান্তর। প্রকৃতির রুক্ষতার মাঝেও এখানে দেখা যায় সারি সারি আম্রকানন, আখের খেত কিংবা পানের বরজ। বাংলাদেশের সুন্দরবন সুন্দরী গাছের জন্য বিখ্যাত। কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূল বিশ্বের সর্ববৃহৎ সৈকত। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল এলাকাজুড়ে সীমাহীন সৌন্দর্যের সমাবেশ। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আদিবাসীদের বসবাস। হাতে গোনা শহরগুলো বাদ দিলে বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। গ্রামের সৌন্দর্যে কোনো কৃত্রিমতা নেই। যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু মাঠ আর মাঠ। প্রকৃতিগত অবস্থান বিবেচনায় বাংলাদেশকে সমৃদ্ধিশালী দেশ বলা যায়।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। ছোট-বড় অসংখ্য নদী এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে। প্রতিবছর বন্যায় এ নদীগুলো পলিমাটি বহন করে। আর এ কারণে বাংলাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল পলিমাটি দিয়ে গঠিত। পলি মাটির উর্বরতার কারণে এদেশে ভালো ফসল জন্মায়। এদেশের প্রায় অধিকাংশ অঞ্চলে বছরে তিনবার ফসল উৎপাদন করা হয়।
বাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত। এদেশের ওপর দিয়ে ক্রান্তীয় মৌসুমি বায়ু বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় প্রবাহিত হয়। ফলে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি। বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৪৫° সেলসিয়াস এবং শীতকালে ১৫ থেকে ২৫° সেলসিয়াস থাকে। এদেশে ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে বেশি শীত ও এপ্রিল-মে মাসে গরম বেশি থাকে। তবে প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের কারণে যেভাবে সমস্ত পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আমাদের দেশেও তার প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মৌসুমি বায়ু এ দেশের ওপর দিয়ে বছরের অধিকাংশ সময়ই প্রবাহিত হয়। ফলে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে বায়ু প্রবাহের দিক পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে এদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়। এ বায়ু প্রচুর জলীয় বাষ্প বহন করে। ফলে গ্রীষ্মের শেষে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। পৃথিবীর মানচিত্রে এশিয়ার ছোট্ট, সবুজ ভূমি বাংলাদেশ। এর নদী-নালা, খাল-বিল, এর পাহাড়-টিলা, বন-বনানী, এর সমতল ভূমি মিলে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া এক বিচিত্র রূপের অপূর্ব সমারোহ। প্রকৃতির রূপসী কন্যা আমাদের এই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তার ঋতুবৈচিত্র্যের মধ্যে চমৎকারভাবে প্রত্যক্ষ করা যায়। বার মাসে ছয় ঋতুর এদেশে প্রতিটি ঋতু তার অনন্য বৈশিষ্ট্য নিয়ে আগমন করে এবং নিজের অনাবিল সৌন্দর্য উপহার দিয়ে বিদায় নেয়। সারাটি বছর নব নব রূপের মধ্যে আমাদের বসবাস। প্রকৃতি পাল্টায়। আকাশ রং বদলায়। আমাদের মনের আকাশেও লাগে তার ছোঁয়া। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ, অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। গ্রীষ্মে, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তের নিয়ত লীলা এর নিসর্গকে দিয়েছে বিচিত্র বিভূতি। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদ, ছাতিমের স্নিগ্ধ ছায়া, নদীর নীলাভ গহ্বর থেকে জেগে ওঠা বালুচরে খেয়ালি দুপুরে হঠাৎ হাওয়ার মাতম গ্রীষ্মের এই বাংলাদেশ বর্ষায় একেবারে ভিন্ন রকম। শুধু কুলছাপানো কালো জল, শুধু সারাদিন সারারাত গলে পড়ে আকাশ। গ্রীষ্মের বুকফাটা বাংলাদেশ বর্ষায় ফিরে পায় অকূল যৌবন। আসে শরৎ, ধীর, সজল, লাবণ্যময়। তার সাদা কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশে উড়ে যাওয়া বলাকার সারি আর রাত্রিভর অবিরাম, অকৃপণ নীলিমা তার পেয়ালা থেকে ঢেলে দেয় জোছনার সফেদ স্নিগ্ধতা। হেমন্তে পাকে ধান। বাংলাদেশের মুখে তখন মাতৃত্বের মহিমা। এর মধ্যে ঘাসের বুকে জমে ওঠে শিশির। শীত আসে। পাতা ঝরে। ভোরের বাঁকা রোদে ঘাসের ডগায় লেগে থাকা অসংখ্য শিশিরকণায় ঝলমল করে লক্ষ কোটি বাংলাদেশ। তারপর বসন্ত। হাওয়া বয় দক্ষিণে। ফুলে ওঠে নৌকার পাল। বৃক্ষের বাকল চিরে বেরিয়ে আসে পাতা। রোদে তা পান্নার মতোই ঝলমল করে। রিপ ভ্যান উইঙ্কল-এর মতো ‘এ দেশ যেন গাঢ় শীতার্ত রাত্রির দীর্ঘ সুপ্তি থেকে জেগে ওঠে।’ কড়ি ও কোমলে বাঁধা এর জলবায়ু, এর প্রকৃতি। যেমন প্রকৃতি, তেমনি সাহিত্য আর সংস্কৃতি। হেমন্তের ধানী রং উদাস অন্তরাগে যে মাঝি নদীজলে ভাসায় ডিঙি, দূর অচেনা গায়ে কোনোদিন না পাওয়া কলসি কাঁখের বধূটির জন্যে, গলায় তোলে সুর- বর্ষায় খরস্রোতা নদীতে দক্ষ হাতে সেই ধরে হাল। বলিষ্ঠ মুঠিতে ধরে রাখে লাঙলের বাঁট- জেগে ওঠা চরে নিশীথে প্রতিধ্বনিত হয় তারই হুংকার। এদেশে যেমনি রয়েছে লালন- রবীন্দ্রনাথ, তেমনি নজরুল-মাইকেল। যেমনি নন্দলাল, তেমনি জয়নুল। যেমন আব্বাসউদ্দিন, তেমনি রমেশ শীল কিংবা অমর নট বুলবুল চৌধুরী। খোল-করতালের আদিবাসী উৎসবের পাশে এখানে সকাল-সন্ধ্যায় উচ্চারিত হয় শান্ত, আজান ধ্বনি, বাজে মন্দিরের কাঁসার ঘণ্টা। সুন্দরবনের ডোরাকাটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর গোখরার বিশাল ফণার নিচেই তো এখানে বাস করে আয়তচোখ অসংখ্য হরিণ শিশু। তাই বলতে হয়-রুপসি বাংলার বাংলাদেশ, রূপের যে তার নেইকো শেষ।
বাংলাদেশ প্রকৃতির নন্দনকাননের সৌন্দর্যমণ্ডিত কোনো সার্থক চিত্রশিল্পীর নিখুঁত চিত্রকর্মের সঙ্গে তুলনীয়। ব-দ্বীপ সদৃশ এ বঙ্গভূমির রয়েছে বিচিত্র ভূভাগ এবং সমুদ্র শুনিত বিস্তীর্ণ উপকূল। সমুদ্র তটরেখা ও ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন যা অবর্ণনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। এখানে আছে সমান্তরাল ভূমি, পাহাড়-পর্বত, জলপ্রপাত, চা-বাগানের আহামরি দৃশ্য, সবুজ গালিচার মতো শস্য ক্ষেত, মাঠ-প্রান্তর। আর বিশেষ করে মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে আছে রূপালি সব ছোট বড় নদনদী। এছাড়া আমাদের এই সবুজ শ্যামল বাংলার প্রকৃতি জুড়ে ছয় ঋতুর অপরূপ খেলা চলে বছর জুড়ে। বাংলাদেশের প্রকৃতি যেন বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের খনি। এর রৌদ্রময় উজ্জ্বল দিন, স্নিগ্ধ জোৎস্নাময় রাত, দিগন্ত জোড়া ছায়াঘন বন-বনানী, কত না নদীর রুপালি ঢেউয়ের হাসি ইত্যাদির তুলনা নেই। এ দেশের কাজলকালো দিঘির জলে ফুটে থাকা অযুত শাপলার শোভা, মাঠে মাঠে হাওয়ার দোলা, সরষে ফুলের অফুরন্ত সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করে। এমনই বিচিত্র ও অপরূপ সৌন্দর্যের আধার আমাদের এই বাংলাদেশ। আর এ জন্যই এ দেশে এত সাধক, কবি, শিল্পী ও কর্মীর এমন অপূর্ব সমাবেশ। এত রূপ আর এত মহিমার প্রকৃতিঘেরা দেশ আর কি কোথাও আছে?
প্রকৃতির অঢেল সৌন্দর্যের রূপ ছড়িয়ে আছে গোটা দেশ জুড়ে। তবে অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্যও আছে। শাল মহুয়ার ঘন বীথি, ঝিলিমিলি ঝিল আর বিশাল বিল প্রকৃতিকে করেছে ঐশ্বর্যশালী ও লাবণ্যময়। পশ্চিম অঞ্চলের অবারিত প্রান্তর, বালুময় পথঘাটে আছে ধূলিধূসর রুক্ষতা। তবে মাঠের পর মাঠ আখের ক্ষেত, আম বাগান ও পানের বরজ আছে। সেখানেও দিগন্ত জুড়ে সবুজ শ্যামলিমা। পূর্বাঞ্চলে নীলাভ পাহাড়ের ঢালে বিছানো চায়ের বাগানগুলো যেন সবুজ সিঁড়ির ধাপ দিয়ে সাজানো। তারই ফাঁকে ফাঁকে ছায়াবীথির বিস্তার। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পাহাড়ি নদীর বুকে ঢলে পড়া সূর্যের আভা রঙের কারুকাজ ফুটিয়ে তোলে। মধুপুর ও ভাওয়াল অঞ্চলের প্রকৃতিতে রয়েছে ভিন্নতর দৃশ্যপট। সেখানে গেরুয়া মাটিতে সারি সারি গজারি গাছের বিস্তার। আর দক্ষিণের উপকূল জুড়ে রয়েছে সুন্দরবন।
সুপুরির বাগান। বেত-শোলা-কেওড়ার বন আর প্রান্তর জোড়া ধানক্ষেত। সেখানে ঘর বেঁধেছে। সংগ্রামে দুর্জয় মানুষেরা। জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে তারা বাঁচে আর সমুদ্র শান্ত থাকলে তারা বাঁচে সাগরের সঙ্গে মিতালি করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর উপমহাদেশের এ দেশটি তাই মন-মাতানো, দৃষ্টিনন্দন এবং কবি লেখক তৈরিতে সহায়ক হয়েছে। এর সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে কবি পেয়েছে ভাষা, মানুষ পেয়েছে আশা। পর্যটক চোখ খুলে মন ভরে উপভোগ করে এর সৌন্দর্য, মেটায় অন্তরের তৃষ্ণা। এর অনুপম নৈসর্গিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগের জন্য বাংলাদেশ যুগে যুগে হাতছানি দিয়েছে কাছের ও দূরের ভ্রমণপিপাসুদের। অনেকেই তাদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতায় প্রশক্তি গেয়েছেন বাংলাদেশের মনলোভা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের। এমনই একজন পর্যটকের উক্তিঃ বাংলাদেশে প্রবেশের হাজার দুয়ার খোলা রয়েছে কিন্তু বেরুবার একটিও নেই।
পৃথিবীর দীর্ঘতম বেলাভূমি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। আর এ কক্সবাজারের কথা বললেই চোখে ভাসে মুক্ত আকাশ। সামনে অবারিত জলরাশি। শুভ্র ফেনিল ঢেউ যে কাউকে মুহূর্তে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে ফেলে। রয়েছে সাগর মোহনায় নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এছাড়াও রয়েছে সোনাদিয়া দ্বীপ, সাগর কন্যা নিঝুম দ্বীপসহ আরও অনেক দ্বীপের মনলোভা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃশ্যপট। ফয়েস লেকের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেমন অপরূপ তেমনি মোহনীয়। নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কুয়াকাটা। প্রকৃতির কোলে অথই জলরাশি শুধু কৌতূহল জাগায়। এর সমুদ্রতট থেকে দেখা যায় সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য। সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে মিতালী করে বেঁচে থাকে এখানকার মানুষ।
পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। প্রকৃতির নিজের হাতে গড়া এ বন নানা জীববৈচিত্র্যে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে, নানা বৃক্ষরাজিতে শোভিত গভীর রহস্যে ভরা। পাহাড়িয়া অঞ্চল বাংলাদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে সমৃদ্ধতর করেছে। এ অঞ্চলটি বৃহত্তর ময়মনসিংহ, সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবান অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। ময়মনসিংহের মধুপুর ও গাজীপুরের ভাওয়ালের গড়, কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের বনাঞ্চল যেন অপার সৌন্দর্যের আধার। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িয়া অঞ্চল, গারো পাহাড়ের পাদদেশ ও সিলেটের সবুজে সবুজে ছাওয়া বিস্তীর্ণ চা বাগানসহ সমগ্র পাহাড়িয়া অঞ্চল জীববৈচিত্র্যে ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সমৃদ্ধ।
তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে। আমাদের ছোট গাঁয়?
হরিতে-হিরণে, সবুজে-শ্যামলে, সুজল-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। যার মূলভিত্তি ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলো। প্রায় বিরানব্বই হাজার গ্রাম নিয়ে গঠিত এই দেশের শতকরা ৮৫ জন লোক পল্লিগ্রামে বাস করে। পল্লির সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা রূপ নিয়ে কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল-
আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন, মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এর নদী-নালা, হাওড়-বাওড়, খাল-বিল সব মিলে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া- এক বিচিত্র রূপের অপূর্ব সমারোহ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, আড়িয়াল খাঁ, কর্নফুলী আর বুড়িগঙ্গা যার বুকে ভেসে থাকা রংবেরঙের পাল তোলা সারিসারি নৌকার অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন রূপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় ও আকর্ষণীয় করে তোলেছে। অপরদিকে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জুড়ে অবস্থিত চলনবিল এবং সিলেট অঞ্চলের হাকালুকি হাওড়সহ অসংখ্য হাওড়-বাওড় এদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে বিশিষ্টতা দান করেছে। তাই আজ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে।
তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে। আমাদের ছোট গাঁয়?
হরিতে-হিরণে, সবুজে-শ্যামলে, সুজল-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমাদের এই দেশ বাংলাদেশ। যার মূলভিত্তি ছায়াসুনিবিড় শান্তির নীড় ছোট ছোট গ্রামগুলো। প্রায় বিরানব্বই হাজার গ্রাম নিয়ে গঠিত এই দেশের শতকরা ৮৫ জন লোক পল্লিগ্রামে বাস করে। পল্লির সুজলা সুফলা শস্যশ্যামলা রূপ নিয়ে কবির কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল-
আমাদের গ্রামখানি ছবির মতন, মাটির তলায় এর ছড়ানো রতন
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এর নদী-নালা, হাওড়-বাওড়, খাল-বিল সব মিলে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া- এক বিচিত্র রূপের অপূর্ব সমারোহ। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, আড়িয়াল খাঁ, কর্নফুলী আর বুড়িগঙ্গা যার বুকে ভেসে থাকা রংবেরঙের পাল তোলা সারিসারি নৌকার অপূর্ব দৃষ্টিনন্দন রূপ বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও মোহনীয় ও আকর্ষণীয় করে তোলেছে। অপরদিকে পাবনা, নাটোর ও সিরাজগঞ্জ জুড়ে অবস্থিত চলনবিল এবং সিলেট অঞ্চলের হাকালুকি হাওড়সহ অসংখ্য হাওড়-বাওড় এদেশের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যে বিশিষ্টতা দান করেছে। তাই আজ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ অঞ্চল পলিগঠিত বিস্তীর্ণ সমভূমি অঞ্চল। উর্বর এ সমভূমি অঞ্চলে দৃষ্টিগোচর হয় সবুজের সমারোহ। সবুজ মাঠের দিকে তাকালে মনে হয় এ যেন সবুজের বিশাল সমুদ্র। শস্যসম্ভবা সবুজ শ্যমলিমা যখন মৃদুমন্দ বাতাসে আলোড়িত হয় তখন মনে হয় সবুজ উর্মিমালা বুঝিব ধেয়ে যাচ্ছে দিগন্তের পানে।
হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে গড়া এ দেশ। এ দেশের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি এর রূপমাধুর্যে যেন একটি স্বতন্ত্র মাত্রা যোগ করেছে। বাংলা বর্ষবরণ ও বসন্তবরণের মতো অনুষ্ঠানগুলো আমাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গে পরিণত হয়েছে। এগুলো রঙ, রূপ ও বৈচিত্রে সমকালীন প্রকৃতির অনুরূপ। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশে এগুলো ভিন্ন ও রোমাঞ্চকর আমেজ সৃষ্টি করে। ফলে সুপ্ত মনের পাতায় পাতায়, মনের অজান্তেই আমরা এঁকে যাই প্রকৃতির ছবি, লিখি কবিতা, গেয়ে উঠি গান। মন হারিয়ে যায় অজানা ঠিকানায়।
বাংলাদেশের প্রকৃতি কখনো কখনো ধ্বংসাত্মকরূপে আবির্ভূত হয়। গ্রীষ্মের আগমনে বাংলার প্রকৃতি রুক্ষ ও বিবর্ণ হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড তাপে হারিয়ে যায়, সবুজ প্রকৃতির অপরূপ শ্যামল শোভা। ফেটে চৌচির হয়ে যায় ফসলের মাঠ, শুকিয়ে যায় নদী, চারিদিকে কেবল ধু-ধু হাহাকার। ভয়াল রুদ্র রূপ নিয়ে হাজির হয় কালবৈশাখি। এটি উড়িয়ে নিয়ে যায় আমাদের বাড়িঘর, ভেঙে ফেলে গাছপালা। প্রচণ্ড গরমে মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে। মানুষ তখন চাতক পাখির ন্যায় আকাশ পানে চেয়ে থাকে। বর্ষাকালেও প্রকৃতি মাঝে মাঝে ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত বন্যায় সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় মানুষের কষ্টের সীমা থাকে না। বন্যা, জলোচ্ছাসের ফলে মানুষের অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয়। উপকূলবর্তী মানুষের সাথে প্রকৃতি সবসময় বৈরী আচরণ করে। জলোচ্ছাসের সাথে তাদের প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। অতিরিক্ত বন্যায় গবাদি পশুর অনেক ক্ষতি সাধিত হয়। শীতকালে আমাদের দেশের গরিব মানুষদের দুঃখের সীমা থাকে না। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষদের বেশি শীতের কষ্ট সহ্য করতে হয়। শীতে বৃদ্ধ ও শিশুদের বেশি কষ্ট হয়ে থাকে। নানান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের সময় কাটাতে হয়।
বাংলাদেশের প্রকৃতির ন্যায় এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও পরিলক্ষিত হয় না। প্রকৃতিই বাংলাদেশকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দান করেছে। বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু তাদের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যে কানায় কানায় ভরিয়ে তুলেছে বাংলার প্রকৃতিকে। এর প্রভাব বাঙালির হৃদয়েও পরিলক্ষিত হয়। প্রকৃতি এ দেশের মানুষের মনকে নানা রঙের আলপনায় বিচিত্র অনুভবে রঙিন করে তোলে। প্রকৃতির কল্যাণেই আমরা বাংলাদেশে চিরকাল সুখ, সৌন্দর্য ও শান্তি অনুভব করি।

আরও পড়ুন